বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন

সৌদি যুবরাজ প্রথা ভেঙে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্মান জানালেন

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
  • ৬ সময় দেখুন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ১৩ মে ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): মধ্যপ্রাচ্য সফরের সূচনায় মঙ্গলবার (১৩ মে) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে শুধু সফর নয়- এই আগমনের শুরুতেই নজর কাড়ে সৌদির ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক সৌজন্য।

 

দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথা ভেঙে স্বয়ং বিমানবন্দরে গিয়ে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। এমন সম্মান আগে খুব কম বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকেই দেখিয়েছে রিয়াদ।

 

প্রথাগতভাবে সৌদিতে অতিথিদের অভ্যর্থনায় উপস্থিত থাকেন কোনো প্রাদেশিক গভর্নর বা নিম্নপদস্থ রাজপরিবারের সদস্য। কিন্তু ট্রাম্পের বেলায় যুবরাজ নিজেই ছিলেন স্বাগত জানাতে, যা সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং সফরের কূটনৈতিক গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়।

 

আরও চমকপ্রদ ছিল ট্রাম্পকে বহনকারী বিমান যখন সৌদি আকাশসীমায় প্রবেশ করে, তখন থেকে রিয়াদ পর্যন্ত সৌদি বিমানবাহিনীর দুটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান তাকে এস্কর্ট করে নিয়ে যায়। রিয়াদে অবতরণের পর ট্রাম্পকে নেওয়া হয় গ্র্যান্ড হলে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী আরব কফি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

 

এই সফরের বড় আকর্ষণ শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং বিশাল অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তিও। আরব নিউজ জানায়, সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে একাধিক ব্যবসা ও প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়েছে।

 

এর মধ্যে রয়েছে সৌদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও প্রযুক্তি সহায়তা চুক্তি, যার আওতায় সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত অস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং নজরদারি প্রযুক্তি কিনবে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং সৌদি আরব তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে, বিশেষ করে ইরান ও ইয়েমেন সংকটের প্রেক্ষাপটে।

 

এই সফরকে অনেকেই বলছেন ‘ঐতিহাসিক’। কারণ ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কূটনৈতিক সংকট নিরসনের একটি বড় উদ্যোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। গাজায় চলমান সংঘাত, ইয়েমেনে হুতিদের ওপর সৌদি হামলা এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি- এই তিনটি ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

 

বলাইবাহুল্য, ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে এই মুহূর্তে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে গাজা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নরম অবস্থান নেতানিয়াহুর অসন্তোষের কারণ হয়েছে।

 

এই সফরের সময়কালেই হামাস গাজা থেকে মুক্তি দেয় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে, যাকে রেড ক্রসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ট্রাম্প একে ‘বড় সাফল্য’ বলে অভিহিত করেন।

 

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর শুরু করেছিলেন সৌদি আরব দিয়ে। এবার দ্বিতীয় মেয়াদেও আবার রিয়াদ দিয়েই শুরু- কিন্তু পার্থক্য হলো, এবার সফর তালিকায় ইসরায়েল নেই।

 

বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি কৌশলগত বার্তা, যা সৌদি ও উপসাগরীয় রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারকে স্পষ্ট করছে।

 

প্রথা ভেঙে সৌদি যুবরাজের এই সম্মান প্রদর্শন এবং ট্রাম্পের সফরে বিশাল প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সমীকরণে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিমান এস্কর্ট থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী আপ্যায়ন- সবই ইঙ্গিত দেয়, রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এখন শুধু ঘনিষ্ঠ নয়, বরং কৌশলগতভাবেও অভিন্ন পথের দিকে এগোচ্ছে।

 

সূত্র : আল-জাজিরা ও সিএনএন

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর