ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শ্রমিক দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের আয় দিন দিন কমছে। শ্রমিকের জীবনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই।

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আগামীকাল বেলা দুইটায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করবে। সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন।

রিজভী বলেন, ‘পতিত হাসিনা সরকারের লুটপাট ও দূর্নীতির কারণে সরকারি পাট ও চিনিকলগুলো বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানো হয়েছে। তারা স্ত্রী সন্তানসহ অর্ধহারে-অনাহানে দিনাতিপাত করছে। বই-খাতা ক্রয় করতে না পেরে তাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না।’

গত ১০ বছরে ন্যূনতম মজুরি ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা না হওয়ায় শ্রমজীবি মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত বলে মন্তব্য করেন রিজভী। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘প্রচলিত নিয়মে ৫ বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেও, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ন্যূনতম মজুরি ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়নি। অথচ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমজীবীমানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, শ্রমজীবী মানুষের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। এখনও প্রতিদিন শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। বেকার হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। শ্রমিকের জীবনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই।’

বাংলাদেশে শ্রমিক সমাজ আজ সবচেয়ে অবহেলিত বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বাজার মূল্যের সাথে অসংগতি, কম মজুরিতে শ্রমিক সমাজের এখন বেঁচে থাকাই কষ্টকর। অগণতান্ত্রিক শ্রম আইনে মালিক পক্ষের স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়ায় শ্রমিক সমাজ সর্বত্র হয়রানিসহ নানা অসুবিধার সম্মূখীন হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩ এর মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি উত্থাপনের অধিকারকে আইন করে বন্ধ কারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

শ্রমিক দলের আগামীকালের সমাবেশের কথা বলতে গিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বিগত সরকারের আমলে তাদের ওপর নির‌্যাতনের কথা তুলে ধরেন।

রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের প্রাক্কালে বিএনপি ও শ্রমিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই সময় কারাবন্দি শ্রমিকদল নেতা ফজলুর রহমান কাজলের হাতে হ্যান্ডকাপ, পায়ে ডান্ডা বেড়ি পরা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে বিনা চিকিৎসায় হত্যা, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে চারজন গার্মেন্টস শ্রমিক- আঞ্জুয়ারা খাতুন, রাসেল হাওলাদার, জালাল উদ্দিন ও মো. ইমরানকে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।’

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মহান মে দিবস পালিত হবে। এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে অগণিত শ্রমিকের আত্মদান ফ্যাসিস্টের পতনকে ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৭১ জন নেতাকর্মী, ৩০ জন রিকশাশ্রমিক ও অসংখ্য নাম না-জানা ভাসমান শ্রমিক শহীদ হন।’

শ্রমিকশ্রেণীর আত্মত্যাগ কেউ কেউ স্বীকার করতে কার্পণ্য করে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ভোটাধিকার প্রয়োগ, শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা শ্রমিকের আজন্ম স্বপ্ন।

অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শোভন কাজ, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থার দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষ অংশ নেবেন বলে আশা করেন রিজভী।

সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন জানিয়ে রিজভী বলেন, সমাবেশে বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি ও সমসাময়িক জাতীয় রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন সমাবেশের প্রধান অতিথি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ জাতীয় ও শ্রমিক নেতারা বক্তব্য দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক মীর সরাফৎ আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।