জাহাঙ্গীর আলম-মির্জাপুর উপজেলা প্রতিনিধি (টাঙ্গাইল), ০৩ মে ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ১৫ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে যে ধান গোলায় তোলার কথা, সেই ধান ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতির মুখে। উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া ও গোড়াই ইউনিয়নের পাথালিয়া পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
কৃষক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বহুরিয়া এলাকার এমএসবি, আরবিসি ও বাটা নামক তিনটি ইটভাটার আগুন নিভানোর সময় সেখান থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় এই ক্ষতি হয়েছে। এতে ওই এলাকার পাঁচটি প্রজেক্টের আওতাধীন অন্তত ১৫ একর জমির ধান ঝলসে নষ্ট হয়ে গেছে।
বহুরিয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে তার ২০ শতাংশ জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ইটভাটার মালিক কাউকে কাউকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা দিয়েছেন, কিন্তু তা ক্ষতির তুলনায় একেবারেই কম।
রাজিয়া নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘বিল্লালের ইটভাটার আগুনে আমার ৮০ শতাংশের একটি ক্ষেত ও ফরিদের ইটভাটার কারণে ৩০ শতাংশ ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দরকার নাই, আমাগো ধান দিক, গরুর খড় দিক।’
পাথালিয়া পাড়ার তাসলিমা নামের এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন, ফরিদ ও মনির নামের দুজনের ইটভাটার আগুনে তার দুটি ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফরিদ তার ৮ শতাংশ জমির জন্য শতাংশ প্রতি মাত্র ২০০ টাকা করে দিয়েছেন। কিন্তু মনির কোনো টাকা দেননি।
বিরন সিকদার নামের এক কৃষক বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে এই এলাকার ৫টি প্রজেক্টের কইলা, সাইফুল, বদু, আনন্দ রাজবংশী, বাছেদসহ প্রায় শতাধিক কৃষকের ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার কৃষি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, গাছের ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এমএসবি ইটভাটার মালিক ফরিদ বলেন, ‘আমি প্রজেক্টের লোকদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১২ একর জমির ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। এর মধ্যে ৫৩৯ শতাংশ জমির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে শতাংশ প্রতি ৫০০ টাকা ও কাউকে কাউকে সবনিম্ন ২০০ টাকা করে দিয়েছি।’
এইচইউবি ইটভাটার মালিক মনির বলেন, ‘আমার ইটভাটায় কোনোক্ষেতের ধান পোড়েনি। যার ভাটার আগুনে পুড়েছে সে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।’
বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু আমার কী করার আছে এ বিষয়ে! প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিবে।’
প্রসঙ্গত, ওই এলাকায় স্থাপিত নতুন ৭টি ইটভাটার অনুমোদন না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে কিলন ও চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়ে ইটভাটাগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ইটভাটার মালিকরা অস্থায়ী চিমনি তৈরি করে ইট বানানো অব্যাহত রাখে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘বিষাক্ত গ্যাসে ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে উত্থাপন করেছি।’ কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই ইটভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply