ঢাকা, ১৪ মে ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। করে। হঠাৎ এই হামলায় শিক্ষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে এ কর্মসূচি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অভিমুখে যাত্রা করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। পথে পুলিশের বেশ কয়েকটি ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে, কাকরাইল মোড় পৌঁছালে সেখানে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আহত শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই অধিকারটুকু থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর টিয়ারশেল ছোঁড়ে ও লাঠিচার্জ করে। আমি নিজে মাথায় আঘাত পেয়েছি, আমার একাধিক বন্ধুও রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমাদের শিক্ষকরা আমাদের পাশে ছিলেন, তারাও রেহাই পাননি। এটা ছিল এক নির্মম হামলা, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”
হামলার শিকার হওয়া সাংবাদিক মেহেদি হাসান বলেন, “আমি সাংবাদিক হিসেবে আন্দোলন কাভার করছিলাম। হঠাৎ পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে আমি নিজেও আঘাত পাই। বারবার পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ আমাকে ছাড়েনি। এটি শুধু একটি আন্দোলন দমনের চেষ্টা নয়, এটি ছিল মতপ্রকাশের অধিকার হরণ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত।”
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করে প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার দায় সম্পূর্ণভাবে তাদেরই নিতে হবে।
বর্তমানে যমুনা এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আহতদের অনেকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যতদিন না দাবি আদায় হচ্ছে, ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
জানা গেছে, গত সোমবার শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন বিষয়ে আলোচনা হলেও দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা।
তাদের ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করলেও ইউজিসি বরাবরের মতোই দায়সারা আশ্বাস দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংগঠনের প্রতিনিধিরা একত্রে আলোচনা করে ‘লং মার্চ টু যমুনা’র ঘোষণা দেন।
তিন দফা দাবিতে এই লংমার্চ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
তাদের তিন দফা দাবি হলো—
১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জবির ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।
২. জবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে।
৩. জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, পুলিশি বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে পড়েছেন। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও রয়েছেন। লাঠিচার্জে হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও আহতের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Leave a Reply