বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন

কাশ্মীর হামলার পর ভারতের মুসলিমদের ওপর চাপ ও দমনপীড়ন বেড়েছে

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
  • ৫ সময় দেখুন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ০১ মে ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক এক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ধরপাকড়, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ নানা দমনমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীরা। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

 

গত সপ্তাহে কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মের অনুসারি ছিলেন। ভারতের দাবি, এই হামলায় পাকিস্তান মদদ দিয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।

 

হামলার জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার জবাবে ‘সন্ত্রাসীদের নিশ্চিহ্ন’ করার ঘোষণা দেন এবং বক্তব্যে পাকিস্তানে সামরিক হামলার ইঙ্গিতও দেন। জবাবে পাকিস্তানের এক মন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, তারা যে কোনো সম্ভাব্য আগ্রাসনের মোকাবিলায় প্রস্তুত।

 

এদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও চলছে দমনপীড়ন। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ অভিযানের নামে মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নানা স্থানে ‘বাংলাদেশি’ ও ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয়ে ভারতীয় মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে। অথচ এদের অনেকেই দেশটির নাগরিক।

 

অপরদিকে কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও। হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় ২ হাজার স্থানীয়দের সন্দেহের জেরে আটক করা হয়েছে ‘সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্ট’ অভিযোগে। অনেকে অভিযোগ করছেন, তাদের বাড়িঘর বিনা নোটিশে ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাশ্মীরি ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা হুমকি ও হয়রানির মুখে রয়েছেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো এমনকি কাশ্মীরি ফেরিওয়ালাদের মারধরের ভিডিও প্রকাশ করছে সামাজিক মাধ্যমে।

 

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, পেহেলগামে যা ঘটেছে, তা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু তা কোনোভাবেই সংখ্যালঘুদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলার অজুহাত হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণার ভাষা এই সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটকে মুসলিমদের লক্ষ্য করে হত্যার মতো ঘৃণামূলক অপরাধ ঘটেছে। উত্তর প্রদেশে সম্প্রতি এক মুসলিম রেস্তোরাঁকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়, আরেকজন আহত হন। হামলাকারীরা একটি ভিডিওতে ২৬ জনের মৃত্যুর বদলায় ২,৬০০ জনকে হত্যার শপথ নেয়। যদিও পুলিশ পরে জানায়, হত্যার পেছনে ছিল ‘খাবার সংক্রান্ত’ বিরোধ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হেট ক্রাইম হিসেবেই বিবেচ্য।

 

উত্তর প্রদেশ পুলিশের দাবি, তাদের অভিযানে ৬,৫০০ জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আটক ব্যক্তিদের দড়ির বেড়ায় ঘিরে রাস্তায় হাঁটানো হচ্ছে। অথচ পুলিশই পরে জানায়, এদের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনকে ‘অবৈধ’ হিসেবে শনাক্ত করা গেছে।

 

গুজরাটের আহমেদাবাদেও এমন একটি মুসলিম বসতিতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২,০০০ বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ২,০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয় এই অভিযানে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি দাবি করেন, এটি ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ উচ্ছেদ অভিযান। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তারা বহু বছর ধরে সেখানেই বসবাস করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি নোটিশ ছাড়াই ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

সামাজিক কর্মী হর্ষ মন্দার বলেন, ভারতের মুসলিমদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের অধিকার হরণ করাটা বিজেপির বহু পুরনো কৌশল। তিনি আরও বলেন, এই অভিযান প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কিভাবে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বিভিন্ন রাজ্যে থাকা কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের প্রতিনিধিদের পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

 

বিশ্লেষকদের মতে, পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে বিজেপি একদিকে মুসলিমদের ‘অবৈধ’ হিসেবে উপস্থাপন করছে, অন্যদিকে নিজেদের কঠোর প্রতিরক্ষা নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর